মগরা গ্রাম থেকে ফুটবলের দিকে: রবিলাল মান্ডির স্বপ্নযাত্রা
হুগলির চুঁচুড়ার মগরা গ্রাম পঞ্চায়েত, হাওড়া-বর্ধমান মেইন লাইন শাখার একটি পরিচিত স্থান, যা বিশেষভাবে সরস্বতী পুজোর জন্য পরিচিত। প্রতিদিন মগরা থেকে হাওড়া স্টেশনে পৌঁছান অসংখ্য মানুষ, যাদের মধ্যে এক অন্যতম হলো রবিলাল মান্ডি। কাঁধে ব্যাগ, হাতে ফুটবল এবং গায়ে জার্সি পরিহিত রবিলালের একমাত্র লক্ষ্য—ফুটবল খেলে বড় জায়গায় পৌঁছানো।
বর্তমানে ডায়মন্ড হারবার এফসি দলের সদস্য রবিলাল মান্ডি, কলকাতা লিগে অসাধারণ পারফরমেন্স দিয়ে সবার নজর কেড়েছেন। তিনি ছিলেন ডায়মন্ড হারবারের আইলিগ তৃতীয় ডিভিশন চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য, যেখানে তার খেলা এবং কঠোর পরিশ্রম তাকে এক বিশেষ অবস্থানে পৌঁছে দিয়েছে। দলের স্প্যানিশ কোচ কিবু ভিকুনা, যিনি তার খেলার প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস রেখেছেন, রবিলাল সম্পর্কে বলেন, “তার খেলার স্টাইল অসাধারণ এবং দলের সিনিয়ররা তাকে সর্বদা সাহায্য করে।”
শুরুটা ছিল শৈশব থেকে
রবিলালের ফুটবল যাত্রা শুরু হয়েছিল শৈশব থেকেই। মগরা গ্রামের পাড়ার মাঠে খেলতে খেলতেই তিনি ফুটবল নিয়ে তার প্রথম ভালোবাসা অনুভব করেছিলেন। এরপর, তার কাকা মঙ্গল মান্ডির সহায়তায় উত্তরপাড়ার ক্যাম্পে যোগ দেন এবং সেখান থেকে তার ক্যারিয়ারের প্রথম ধাপ শুরু হয়। ২০১৭-২০১৯ সালের মধ্যে তিনি এটিকে-র রিজার্ভ দলে ছিলেন এবং অনূর্ধ্ব-১৮ দলের সদস্যও ছিলেন।
রবিলাল তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বলেন, “এটিকে-তে খেলার সময় কোচেরা আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছেন, যা আমার ক্যারিয়ারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটিকে-এর মতো বড় দলের সঙ্গে খেলা আমাকে আরও পরিণত করেছে।”
বর্তমান এবং ভবিষ্যত লক্ষ্য
বর্তমানে রবিলাল বাংলা দলের সন্তোষ ট্রফির জন্য ট্রায়ালে অংশ নিচ্ছেন এবং ৩০ জনের প্রথম স্কোয়াডে জায়গা পেয়েছেন। তিনি আশা করছেন মূল দলে স্থান পেয়ে তার স্বপ্ন পূরণের পথে আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবেন। তার পরবর্তী লক্ষ্য হলো ভারতের দুই প্রধান ফুটবল ক্লাব ইস্টবেঙ্গল বা মোহনবাগান দলের হয়ে খেলা। রবিলাল বলেন, “এটাই আমার বড় স্বপ্ন—এই দুটি দলে খেলা। আমি জানি, দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলা প্রত্যেক ফুটবলারের স্বপ্ন।”
একসময় এটিকে রিজার্ভ দলে রবিলালের সতীর্থ ছিলেন অভিষেক সূর্যবংশী, যিনি বর্তমানে মোহনবাগানের আইএসএল দলে রয়েছেন। রবিলালও তার মতই দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশ নিতে চান।
ফুটবলের প্রতি তার অটুট ভালোবাসা এবং কঠোর পরিশ্রম তাকে তার লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, এবং মগরার ছোট্ট একটি গ্রাম থেকে শুরু হওয়া এই ফুটবল যাত্রা হয়তো একদিন তার দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাবে।
0 Comments