জাতিসংঘের আদিবাসী জনগণের অধিকার সম্পর্কিত ঘোষণা (UN Declaration on the Rights of Indigenous Peoples - UNDRIP) এর আওতায় পড়ে। এই ঘোষণাটি ২০০৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয়েছিল এবং এতে আদিবাসীদের সাংস্কৃতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, এবং রাজনৈতিক অধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়েছে।
ভারতের প্রেক্ষাপট:
ভারত
জাতিসংঘের এই
ঘোষণার
পক্ষে
ভোট
দিয়েছিল, তবে
ঘোষণাটি বাধ্যতামূলক আইন
নয়।
ভারতের
সংবিধানেও আদিবাসীদের জন্য
বিশেষ
অধিকার
ও
সুরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে,
বিশেষ
করে
৫ম
ও
৬ষ্ঠ
তফসিলে। তবে
আদিবাসীদের প্রতি
বৈষম্য,
জমি
অধিগ্রহণ, ও
উন্নয়নমূলক প্রকল্পে তাদের
অধিকার
লঙ্ঘন
ইত্যাদি বিষয়ে
বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ রয়ে
গেছে।
যদিও
ভারতের
আদিবাসীদের জন্য
জাতিসংঘে সরাসরি
কোনো
আইনি
প্রতিকার নেই,
UNDRIP এর
মতো
নীতিমালা আন্তর্জাতিক স্তরে
তাদের
অধিকার
রক্ষার
জন্য
একটি
মানদণ্ড হিসেবে
কাজ
করে।
জাতিসংঘে আদিবাসীদের অধিকার
সংক্রান্ত আইন
এবং
নীতিমালা সম্পর্কে
১. জাতিসংঘের আদিবাসী জনগণের অধিকার সম্পর্কিত ঘোষণা (UNDRIP)
জাতিসংঘের এই
ঘোষণা
আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার
সুরক্ষার ক্ষেত্রে একটি
গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা। এটি
আদিবাসীদের অধিকারকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিয়েছে এবং
তাদের
সাংস্কৃতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক এবং
অর্থনৈতিক অধিকারকে সুরক্ষা দেয়।
মূল
উদ্দেশ্য হলো,
আদিবাসীদের উপর
কোনো
প্রকার
জোরপূর্বক কাজ
না
চাপিয়ে তাদের
নিজস্ব
অধিকার
বজায়
রাখা।
UNDRIP এর
কিছু
মূল
বিষয়
হলো:
- আদিবাসীদের
আত্ম-নির্ধারণের অধিকার: আদিবাসীরা তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিকল্পনা ও
নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার রাখে।
- ভূমি,
অঞ্চল, এবং সম্পদের অধিকার: আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যগতভাবে বসবাস করা ভূমি এবং প্রাকৃতিক সম্পদের উপর তাদের অধিকার রয়েছে। এগুলো থেকে তাদের কোনোভাবে বঞ্চিত করা যাবে না এবং যদি আদিবাসীদের জমি বা সম্পদ নিয়ে নেওয়া হয়, তবে তা তাদের সম্মতি নিয়ে করতে হবে এবং উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
- সাংস্কৃতিক
অধিকার ও শিক্ষার অধিকার: আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা, ধর্ম, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য ধরে রাখার অধিকার রয়েছে। তারা নিজেদের পছন্দমত শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে এবং নিজেদের ঐতিহ্যকে রক্ষা ও
প্রসার করতে পারবে।
- পরামর্শ ও অংশগ্রহণ: আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কোনো বিষয় বা জমি সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তাদের সাথে পরামর্শ করা বাধ্যতামূলক। তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো উন্নয়ন প্রকল্প বা সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।
২. ভারতের প্রেক্ষাপটে আদিবাসী অধিকার
ভারত UNDRIP এর পক্ষে ভোট দিয়েছে, তবে এটি আন্তর্জাতিক আইন হিসেবে ভারত বা অন্য কোনো দেশের জন্য বাধ্যতামূলক নয়। তবে ভারতের নিজস্ব সংবিধানেও আদিবাসীদের বিশেষ সুরক্ষা ব্যবস্থা এবং অধিকার রয়েছে। ভারতের সংবিধানে আদিবাসীদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ আইন রয়েছে:
- পঞ্চম
তফসিল: এটি ভারতের আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকাগুলির জন্য বিশেষ প্রশাসনিক ব্যবস্থা নির্ধারণ করে। এই তফসিলের অধীনে থাকা অঞ্চলে আদিবাসীদের জমি এবং সম্পত্তির অধিকার সুরক্ষিত।
- ষষ্ঠ
তফসিল: এটি উত্তর-পূর্ব ভারতের কিছু রাজ্যের আদিবাসী জনগণের জন্য স্বায়ত্তশাসিত জেলা কাউন্সিল গঠনের অধিকার দেয়। এসব কাউন্সিল আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নিজস্ব সাংস্কৃতিক ও
প্রশাসনিক ব্যবস্থা পরিচালনার সুযোগ দেয়।
- আদিবাসীদের জমির অধিকার: ভারতের বিভিন্ন আইন আদিবাসীদের জমি অধিকার রক্ষার ব্যবস্থা করে, যেমন Forest Rights Act, 2006 (বনাধিকার আইন) যা আদিবাসীদের ঐতিহ্যগতভাবে বসবাস করা বনভূমিতে জমির অধিকার প্রদান করে।
৩. আন্তর্জাতিক পরিসরে আদিবাসী অধিকার
আদিবাসীদের অধিকার
রক্ষার
জন্য
জাতিসংঘের অন্যান্য সংস্থাও কাজ
করে,
যেমন
জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন (UN Human Rights Council)
এবং
ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন (ILO)। ILO এর
Convention 169 হলো
আদিবাসী জনগণের
অধিকার
নিয়ে
একটি
বাধ্যতামূলক আন্তর্জাতিক চুক্তি,
যদিও
ভারত
এই
চুক্তি
অনুমোদন করেনি।
৪. চ্যালেঞ্জ ও বাস্তবায়ন
আদিবাসীদের অধিকার
সংক্রান্ত নীতিমালাগুলো থাকা
সত্ত্বেও, বাস্তবে অনেক
ক্ষেত্রেই এগুলো
লঙ্ঘিত
হয়।
বিশেষ
করে
উন্নয়ন প্রকল্পে জমি
অধিগ্রহণ, জোরপূর্বক স্থানান্তর এবং
আদিবাসীদের প্রাকৃতিক সম্পদ
থেকে
বঞ্চিত
করা
অন্যতম
বড়
সমস্যা। অনেক
সময়
আদিবাসী জনগণ
তাদের
অধিকার
সম্পর্কে সঠিকভাবে সচেতন
নয়,
এবং
সরকারের উদ্যোগেও অনেক
ক্ষেত্রে জবাবদিহির অভাব
দেখা
যায়।
৫. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, যেমন
জাতিসংঘ এবং
বিভিন্ন এনজিও,
আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার
রক্ষা
এবং
তাদের
উন্নয়নের জন্য
কাজ
করে
যাচ্ছে। বিভিন্ন রিপোর্ট ও
পর্যবেক্ষণ দ্বারা
এই
সংস্থাগুলো জাতীয়
সরকারগুলোকে আদিবাসী অধিকার
সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক নীতিমালা মেনে
চলার
জন্য
উৎসাহিত করে।
এগুলো
হলো
ভারতীয় আদিবাসী জনগোষ্ঠী ও
জাতিসংঘের সম্পর্কিত নীতিমালা এবং
আইনের
একটি
বিস্তৃত চিত্র।
0 Comments