আসলে "দিসম-সেঁদরা" শব্দটি পৃথিবীর থেকে
আর "দিসম-মান্জহী" আর "দিসম-পারগানা" শব্দটি মঙ্গলগ্রহ থেকে আগত ,
তাই তনল সাহেবের গ্রহণ করতে দ্বিধাবোধ করছেন। ওনার লেখা থেকে বুঝলাম উনি ওনার তথাকথিত "ফাদার" তনল সাহেবকে ভালোই স্টাডি করিয়েছেন।
বাহা বোঙ্গার সময় একটি সেরেঞ্জ--
"জা গোসাই দেশ চ আচুরেন
দিসম চ বিহুরেন।
জা গোসাই তুদে দয় রাগ্" ।
(তনল সাহেব এটা বলতে পারেন এই গানটি আমার লেখা)
এখানে "দেশ" আর "দিসম" শব্দটি বেবহার করা হয়েছে।
আমাদের সানতাড় সমাজে "দেশ-দিসম" শব্দটির বর্তমানের রাষ্ট্র ( NATION) অর্থে ব্যবহৃত হয়নি । "দেশ-দিসম" শব্দটি এলাকা/সীমানা) অর্থে ব্যবহৃত।
"দিসম সেঁদরা" তাহলে কেন দরকার, গ্রামে সাকরাত এর দিনে সেঁদরা করলেই হলো। দিসম সেঁদরা কে ডাক দেয় ?
উত্তর টা জানতে হবে।
মান্জহী আর পারগানা ব্যবস্থা একে অপরের পরিপূরক। "মান্জহী-পারগানা" পরিকাঠামো থেকে "বাইসি" ব্যবস্থাটা এসেছে , কিন্তু তিনি এদিকে " দিসম সেঁদরা", "ল-বীর বাইসি /ল-মহল"টা একসেপ্ট করছেন কিন্তু জানেন না পীড়, মুলুক, তল্লাট, দেশ/দিসম বলে শব্দগুলো সানতাড় ভাষার শব্দ ভান্ডারে সসম্মানে বিরাজ আছে সেটা মনে হয় জানতেন না।
তিনি যেখানে থাকেন সেখানে স্বচক্ষে "ল-বীর বাইসি/ল-মহল বাইসি" টা দেখেছেন বলে মনে হয়না। দেখলে আরো কিছু জানতেন। ভঞ্জ দিসম, শিকার, ধাড় দিসম , সিলদা দিসম, মান দিসম, ভূম দিসম,
বলে এখনও বর্তমান আছে এছাড়াও আরো অনেক দিসম এর আছে যেগুলো হয়তো আমরা জানিনা। ওই বিভিন্ন দিসম গুলির সাংস্কৃতিক সেরেঞ্জ, রু এনেজ এও বেশি নাহলেও একটু বিভিন্নতা আছে।
তিনি জানেন সানতাড় দের পূর্ব-পুরুষ রা বাসস্থান ত্যাগ করে নতুন জায়গায় বসবাস করছেন তার কারণ মনেহয় জানেন না। তিনি জানেননা আমাদের পূর্ব-পুরুষরা মান সম্মান, সাংস্কৃতিক সম্পদ বাঁচানোর জন্য এক স্থান থেকে প্রতিকূল স্থানে যেতে বাধ্য হয়েছিল ।
1836 সালে কিছু মিশনারি ভারতে এলো , তারা ভারতের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ঘুরে দেখলো যে কোথায় আমাদের আস্তানা গড়লে আমরা আমাদের "খ্রিস্টান ধর্মান্তরিত" কাজটা সহজেই করতে পারবো । তারা বাছল অশিক্ষিত আদিবাসী বহুল ওড়িশা ।
সেখান থেকে শুরু হলো। বেশ কিছু দিনের কিছুদিনের মধ্যেই সানতাড় দের একটা বৃহত্তম অংশকে ধর্ম পরিবর্তন করে দিলো। তার থেকেও বৃহত্তর অংশরা তখন ধর্ম পরিবর্তন করে নি , কারন তারা সানতাড় জাতির আত্মসম্মানকে লোভ লালচ এ না বিক্রিত হয়ে পিছিয়ে থাকাটা বেছে নিল। কিন্তু আজ "বিক্রিত সান্তাড়রা"আজ নিজে কে সানতাড় বলে পরিচিতি দিচ্ছে তার কারণ পরিষ্কার , আজকেও তারা আমাদের ভাগ দখল করেছে। এই তথাকথিত সানতাড় দেখে চিনতে পারা টা প্রায় অসম্ভব।আজকে এনাদের বিবেক জেগেছে , তাই আজকে এরা দোহাই দিচ্ছে সাম্যবাদের, সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার !
এদের আসল মতলবটা অন্য কিছু । এদের ধর্মের তথাকথিত ফাদার, ঠাকুরদার দের পৃষ্টদেশে ভয় ঢুকেছে, কারন অরজিনাল সানতাড় রা এদের ফন্দি বুঝে গেছে তাই ধর্মপুত্রদের দ্বারা নানা প্রশ্ন করাচ্ছে।
এই দেখুন তনল সাহেব কে, তিনি জানেন না পারগানা দের একতা দেখে ব্রিটিশ রাও কেঁপে গিয়েছিল। যাদের জন্য "সানতাড় পারগানা টেনেন্সি" এক্ট দিতে বাধ্য হলো।
যদি "পারগানাদের অস্তিত্ব" ছিলো না তাহলে "সানতাড় পারগানা" শব্দ কোথা থেকে এসেছিলো ?
সানতাড়রা প্রথাগত শিক্ষা অর্জন করেনি, তার প্রথম কারন-সানতাড় রা কারোর তাবেদারি করেনি,
দ্বিতীয় কারন-ভারতীয় বর্নব্যবস্থা,
তৃতীয় কারন- ধর্ম পরিবর্তন করেনি।
এখানে সাহেব প্রশ্ন করেছেন পারগানাদের কিভাবে নির্বাচন করা হয় ?
এর উত্তর জানার জন্য তনল সাহেব ধৈর্য ধরুন ।
আমাদের সমাজের "মান্জহী মড়ে" দের নির্বাচন দুভাবে হয়--
প্রথমত যদি নতুন গ্রাম স্থাপন করলে গুরুদের দ্বারা "চাওরাহা" বঙ্গা বুরুর মাধ্যমে হয়।
দ্বিতীয়ত মাঘবঙ্গাতে গ্রামের ষোলআনা র মধ্য নিজ আলোচনা করে দায়িত্বে "মান্জহী মড়ে" রদবদল হয়।
এই "মান্জহী মড়েরা" গ্রাম-ষোলোআনার যাবতীয় সামাজিক কাজকর্ম তদারকি করেন। কিন্তু এদের কোনো অফিস ছিলোনা, কিন্তু "মানঝি-থান কুলহি-দুরুপ" এর মাধ্যমে 5000 বছর সামাজিক ব্যবস্থা কে টিকিয়ে রেখেছেন।
এর পরে আসছি "পারগানা ব্যবস্থার" নির্বাচন এর উপর।
যে বিষয়টি "মান্জহী-মড়ে" সমাধান করতে পারলো না কিংবা একটা গ্রামের সাথে আরেকটা গ্রামের সমস্যা হলে কিভাবে সমাধান করা হবে ?
সাধারণত এক-একটা গ্রামে সামাজিক-বিদ্যান ,গুণীজন দের সংখ্যা কম থেকে কম পাঁচজনের থেকে তো বেশি, সংখ্যা টা তখন 6, বা 7 বা 8 বা 10 বা আরো বেশি হতে পারে , যারা আবার সামাজিক ব্যবস্থাকে জানে ও বিশ্লেষণ করতে পারে।
এবার ধরুন আমার বাড়িতে আমার ঠাকুরদা রা তিন ভাই , আমার বাবাদের চার ভাই, আমরা আবার পাঁচ ভাই, আর আমি ছোট ভাই।
এরপর ধরুন আমাদের বাবা পাঁচ ভাইবোন কে একশ টাকা দিল, আমার বড় ভাইরা আমাকে ধমক দিয়ে বলে , তুই ছোট আছিস তুই আর আমাকে 10 টাকা টাকা ধরালো, এর পর আমি কি তখন যদি বেশি প্রতিবাদ করি তার উপায় নেই তো। তাই বাড়িতে এসে বাবার কাছে নালিশ করবো। সেটা বাবা মা সমাধান করবে ।
এবার বাবা, কাকা জেঠা দের কোনো বিষয়ে ভুল বোঝাবুঝি হল তাহলে কার কাছে সমাধান করতে যাবে, বাবা কাকা রাও তাদের বাবার কাছে সমাধান করতে যাবে। যদি আমার নিজ ঠাকুরদা জীবিত না থাকেন তাহলে মেজ-সেজো ঠাকুরদা রা সমস্যার সমাধান করবে।
এর পর ঠাকুরদা দের কোনো সমস্যা হলে তারাও তো তাদের বাবার কাছে যাবে। এটাই তো স্বাভাবিক।
এই বিষয় টা সানতাড় সমাজের বুদ্ধিজীবীরা খুব ভালো ভাবে গবেষণা করেছিলেন।
ঠিক সেইরকম ভাবে 8-10 টা বা তার বেশি গ্রাম গুলি মিলে একটি অঞ্চল/মৌজা তৈরি ,এরপর বেশ কয়েক অঞ্চল মিলে প্ৰখন্ড/ব্লক গঠিত হয়, সেই ভাবে কয়েক প্ৰখন্ড/ব্লক কে নিয়ে মহকুমা/সাব-ডিভিশেন হয়। আবার কয়েক সাবডিভিশন নিয়ে জেলা আর কয়েকটা জেলা নিয়ে রাজ্য আর কয়েকটা রাজ্য/স্টেট নিয়ে রাষ্ট্র।
লক্ষ্য করবার একটা বিষয় হলো , বর্তমানে প্রত্যেক টা অঞ্চল, ব্লক,সাব-ডিভিশন, জেলা , রাজ্য, এমনকি রাষ্ট্রের প্রতিনিধি থাকছে।
ভারতবর্ষে সবথেকে প্রথম সারির জাতিগুলোর মধ্য সানতাড় রাও একটা।
এরা তো বর্তমানে র আর্যদের থেকে পুরোনো বসবাসকারী।
সানতাড়রা অনেক আগেই বুঝতে পেরেছিল এর প্রমাণ অবশ্যই পেয়েছি।
ওই যে কিছু আগে বললাম একটা গ্রামের সাথে আরেক টা গ্রামের সমস্যা তখন সেটা অঞ্চল পর্যায়ে কারা বিচার করবে ?
একটা অঞ্চল এর সাথে আর একটি অঞ্চলের সমস্যা হলে কে কারা বিচার করবে ?
একটা ব্লক এর সাথে আরেক টা ব্লকের সমস্যা কারা সমাধান করবে ?
এই রকম ভাবে উপরোক্ত পর্যায় গুলি বাড়তে থাকে ততোই কোয়ালিটি গুণীজনদের চাহিদা বাড়তে থাকে।
সানতাড় সমাজেও অঞ্চল ভিত্তিক সমস্যা সমাধানের জন্য "পীড়-পারগানা"দের উপর ন্যাস্ত করা হয়।
ব্লক ভিত্তিক সমস্যা সমাধানের জন্য মুলুক-পারগানা দের উপর ন্যাস্ত করা হয়।
ব্লক ভিত্তিক সমস্যা সমাধানের জন্য তল্লাট-পারগানা কমিটির উপর ন্যাস্ত করা হয়।
বুঝলেন না ? বোঝাচ্ছি!
উপরে উল্লেখিত যে আমাদের সমাজে "দেশ-দিসম" শব্দটির বর্তমানের রাষ্ট্র ( NATION) অর্থে ব্যবহৃত হয়নি । "দিসম" শব্দটি এলাকা/সীমানা) অর্থে ব্যবহৃত।
অন্যান্য সমাজ ব্যবস্থার মতো সানতাড় সমাজেও পরিবার প্রথমে তারপর গ্রাম, সমাজ প্রভিতি গড়ে উঠে, এবং সমাজ থাকলে সমাজের ছোটো খাটো বিবাদ কলহ থাকবে বা উঠবে এটাই স্বাভাবিক। এই বিবাদ যদি গ্রামের দুই ব্যক্তির মধ্যে হলে "মানঝি মড়ে" ষোলো আনা মীমাংসা করবে। একটি গ্রামের সাথে আরেকটি বা ততোধিক গ্রাম গুলির সমস্যা সমস্যা সমাধানের জন্য পীড় পারগানা ও তার সহযোগীরা সমাধান করেন।
আবার যখনি একটা অঞ্চলের সাথে অন্যান্য অঞ্চল গুলির সমস্যা তেরি হলে আবার মুলুক-পারগানা ও তার সহযোগীরা সমাধান করেন।
আবার যখনি একটা মুলুকের সাথে অন্যান্য মুলুক গুলির সমস্যা তেরি হলে আবার তল্লাট-পারগানা ও তার সহযোগীরা সমাধান করেন।
আবার যখনি একটা সাথে অন্যান্য অঞ্চল গুলির সমস্যা তেরি হলে আবার মুলুক-পারগানা ও তার সহযোগীরা সমাধান করেন।
আবার একটা তল্লাট এর সাথে অন্যান্য তল্লাট গুলির সমস্যা তেরি হলে আবার দিসম-পারগানা ও তার সহযোগীরা সমাধান করেন।
হলফ করে বলতে পারি, বর্তমানে সাবডিবিশেন কোর্ট, জেলা কোর্ট,হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট , এর পরিকাঠামোটা সানতাড় "মান্জহী-পারগানা-বাইসি" থেকে নকল করা হয়েছে।
200 বছর আগে আজকের মতো ভারতের জনসংখ্যাও ছিল না। তাই কেবল চারিদিকে সংখ্যাই আধিক্য আদিবাসীরা ছিলো।
এখানে পারগানা ব্যক্তিরা একটি সিস্টেম বা ব্যবস্থা গড়ে তোলেন সেটা হলো /"পারগানা-মহল-বাইসি" বিচার ব্যবস্থা। যাদের মূল দায়িত্ব ছিলো "সানতাড় সমাজ ব্যবস্থা"কে এন্টিবায়োটিক দিয়ে প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা। আর আমরাও হলফ করে বলতে পারি যতোদিন এই পারগানা ব্যবস্থা মজবুত ছিলো সমাজ পরিষ্কার পরিছন্ন ছিলো।
এবার আসছি 1855 সালে। আমরা সবাই জানি হুল বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়েছিল সিদু মুর্মু । কিন্তু সেই সময়ে না ছিলো মোবাইল, না ইন্টারনেট না ছিলো আধুনিক যাতায়াতের ব্যবস্থা। কিন্তু 10 হাজার (অন্যান্য রিপোর্ট অনুযায়ী 30 হাজার) মানুষ "ঐতিহাসিক 30শে জুন" দিন টিতে শপথ করেন "হয় জোতদার, জমিদার, মহাজন, ইংরেজদের বিতাড়িত করবেন নাহলে মৃত্যুবরণ করবেন " ।
কিন্তু একটা বিষয় আমাদের মতো সাংগঠনিক সামাজিক নেতৃত্ব দের কে ভাবাই , আধুনিক সময়ে আজকে আমরা দেখেছি একটা সামাজিক বিষয়ে সভা করতে 1000 লোক কে জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হই, সেখানে 150 বছর আগে এত মানুষ দলে দলে সমবেত হলো কিভাবে ?
কি এমন মাধ্যম ব্যবহার করা হলো ?
সিদু পারগানা, কানু পারগানা , চাঁদ পারগানা, ভৈরব পারগানা, ও সাম পারগানা, সিংরাই পারগানা, মুচিয়া পারগানা, লক্ষণ পারগানা, রা সানতার সমাজের "সারজম-ঢাওরৌ- গিরা" দিয়ে ডাক দিয়েছিল।
তাহলে কি এই সারজম গিরা ? কেন এই সময় সারজম গিরা ব্যবহার করা হলো ?
কারা নির্দেশ দিলে এটা ব্যবহার করা যায় ?
সানতাড় সমাজে গিরা তিন ধরনের 1,
1, কিতা গিরা : এটা সাধারণত সামাজিক বিবাহ , ভাণ্ডান, ছাটয়ার, প্রভতি তে ব্যবহার করা হয়।
2, লাড় গিরা : এটা বোঝানোর জন্য এক উদাহরণ দিয় , একটা অঞ্চলে একটু বড় ধরনের জলাশয় বা পুকুর জাতীয় আছে। যেটা আবার একটা গ্রামের পাশে আছে। যেহেতু জল শুকিয়ে বা কমে গেলে বছরে ওই পুকরের মাছ ধরা হবে। এবার প্রশ্ন ওই জলাশয়ের মাছের উপর একটা মাত্র গ্রামের অধিকার ?
উত্তর টা সকল গ্রামের অধিকার, তাহলে তখন ওই গ্রামের মানঝি বাবার উদ্দ্যোগে পার্শ্ববর্তী সমস্ত গ্রাম কে নিমত্র্ন পাঠাবেন কিভাবে ?
এরপর আরেকটা উদাহরণ দিলাম , একটা পাতা বা মেলা জাতীয় অনুষ্ঠানে পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলিকে নিমন্ত্রন করা হবে কি ভাবে ?
তখন ওই সময়ে ওই পরিস্তিতি তে " লাড় গিরা " ব্যবহার করা হত। যা আজকেও চলমান ।
3, সারজম গিরা : এরপর যখন বৃহত্তর কোনো সমস্যা হলো তখন পারগানা গন সিদ্ধান্ত নেন সমাজের লোককে ডাকতে হবে, আলোচনা করতে হবে তখন "সারজম গিরা বা সারজম ঢাউরৌ" ব্যবহার হয়।
"সানতাড় সমাজে মশা মারতে কামান দাগা হয়না" অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এটাই "মান্জহী-পারগানা-বাইসি"র বৈশিষ্ট্য।
এই গিরা বিষয় টা পাশ্চাত্য শিক্ষাই শিক্ষিতরা বুঝতে অনেক সময় লাগবে কিন্তু যারা সানতাড় সমাজের অন্তর্ভুক্ত তারা এই বিষয়টি নিয়ে ভালো ভাবে অবগত আছেন।
1855 সালে যখন পারগানা রা বৃহত্তর আন্দোলনের যখন ভাবেন তখনও এই পন্থায় কাজ করে ছিল।
এরপর আসছি 1855 সালের 22 জুন আমরা "সানতাড় পারগানা টেনেন্সি " পেলাম, যেটা ভাগলপুর, গড্ডা, জামতাড়া, পাকুড়, সাহেবগঞ্জ এলাকা কে "সানতাড় পারগানা " বলা হয় কিন্ত "সানতাড় পারগানা টেনেন্সি এক্ট" সমস্ত সানতাড় তথা আদিবাসী এলাকায় প্রযোজ্য। তাহলে অন্যান্য এলাকায় প্রযোজ্য হলো , কারন ওই এলাকা গুলোতেও পারগানা ব্যবস্থা ছিল।
কারন সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশরা বুজতে পেরেছিল "পারগানা ব্যবস্থার শক্তি"।
কারন শুধুমাত্র মাত্র সানতাড়দের ছিলো তা নয় অন্যান্য আদিবাসি জাতিগোষ্ঠীরও ছিলো।
শুধুই তাই নয় বিরসা মুন্ডার উলগুলান এও মানকি মুণ্ডা দের অবদান ছিলো, কুদু ভগত দের ওরাংও দের রাজী পাড়হা দের ভূমিকা ছিলো। আমাদের যেমন দেশ পারগানা তেমন ওরাং ও দের পারগানা দের তাদের পাড়হা রাজা বলা হতো। লাড়কা এবং মুন্ডা দের পারগানা দের মুন্ডা রাজা বলা হতো।
কোলহান চাইবাসা এলাকাই গঙ্গারাম কোলোনডিয়া নেতৃত্বে যে কোল বিদ্রোহ হয়েছিলো সেখানেও মানকি মুন্ডাদের বৃহত্তর অবদান ছিলো।
আমার ঠাকুরদা আমাকে বলতেন তার বাবার বাবা অর্থাৎ ঠাকুরদার ঠাকুরদা দাপুটে পারগানা ছিল , তখন আমিও এত বুঝতাম না, শুধু বুঝেছিলাম পারগানা যারা হয় তাদের দাপট আর অনেক জ্ঞানী গুণী দের নেতা ছিলেন, বড়ো হলাম তো আমার উপর বঙ্গারবুরুর দায়িত্বে এলো তখন জানলাম আমাদের আবগে বঙ্গা দের একটি বোঙ্গা যিনি আবার পারগানা নামের আছে।
আবার সানতাড় গ্রামের ষোলআনার পক্ষ থেকে জাহের/গড টান্ডি রে কুডাম নায়কে যে "বুল মায়াং" দিয়ে পূজা করেন তাদের অন্যতম হলো এই "পারগানা", তার কারণ এই "পারগানা বঙ্গা" রা গ্রাম-সীমানা রক্ষা ও পাহারার মূল দায়িত্বে।
প্রসঙ্গ বিষয় হবার জন্য উল্লেখ করলাম, এইবার বিষয়ে আসি।
ধাড় দিসম হলো বর্তমানের পূর্ব-সিংভূম তথা ঝাড়খন্ড। এ জানা গিয়েছে গ্রামে আতো মান্জহী, অঞ্চলে পুড়শি মান্জহী, কয়েকটি অঞ্চল মিলে একটি তরফ , যেখানে 50 থেকে 60 টি মৌজা মিলে একটি তরফ গঠিত হয়। এরকম 14 টি তরফ মিলে গঠন হয়েছে ধাড় দিসম এবং "ধাড় দিসম দেশ পারগানা" দায়িত্ব ।
সরাইকেল্লা খরসানওয়া জেলাতে সেখানে তরফ পারগানা নেই, যেটা কে তরফ বলা হয় সেখানে পীড় বলা হয়।
ওড়িশাতে আবার তরফ ও পীড় পারগানা নেই। ওখানে আবার ভঞ্জ দিসম দেশ পারগানা , খিনজির দিসম দেশ পারগানা এরাই বর্তমান। সেখানে আবার আমাদের সানতাড় দের তোপোন নাই ঘাট আছে ওই ঘাট এলাকার ঘাট পারগানা দের নামে পরিচিতি আছে। মাঝে যে তরফ বা পীড় থাকার কথা সেটা নেই।
ধাড় দিশমেও তরফ পারগানা নেই কিন্তু এখানেও ঘাট পারগানা আছে। আবার এখানে তোপোন নাই ঘাটের কাজ সম্পূর্ণ করতে এলাকা এলাকায় মুকাম পারগানা রা দায়িত্ব নেস্ত আছে।
আমি যে এলাকায় বসবাস করি তার পার্শ্ববর্তী জেলা বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, মেদিনীপুর এর মধ্যই আবার মান দিসম আর শিকার দিসম পুরুলিয়া জেলা ও বর্তমান ঝাড়খণ্ডের ঘাটশিলা এলাকার বেশ কিছু অংশ অন্তর্গত ।
এখানে দিসম শব্দ টি যদি ব্যবহৃত হয় তাহলে আজকে নাহলেও কোনো এক সময়ে কেউ তো রাজ বা পারগানা ছিল। তাহলে তো একটা ব্যবস্থা অবশ্যই ছিল, পীড়, মুলুক, তল্লাট পারগানা রাই তো দেশ পারগানা কে দায়িত্ব প্রদান করেছিলেন।
সিলদা মুলুক , শিকার দিসম এলাকায় আবার কোনো পারগানা দের উল্লেখ পাওয়া যায়নি , এখানে গ্রামে আতো মান্জহী, আর দেশ (দেশওয়ালি) মান্জহী, দিসম মান্জহী দের উল্লেখ পাওয়া গিয়েছে।
আবার অন্যান্য জেলা বা এলাকা গুলিতে কুঠি দিসম , নামাল দিসম নাম থাকলেও পারগানাদের ইতিহাস কালের গর্ভে বিলীন গিয়েছে ।
তাহলে দেখা গিয়েছে কোনো স্থানে মান্জহী, কোনো স্থানে পারগানা আবার কোথাও পীড়, কোথাও তরফ , কোথাও আবার আবার ঘাট পারগানা , সর্বোচ্চ ভূমিকায় "দেশ/দিসম-মান্জহী/পারগানা" দের নামে পরিচিত হলেও কাজ তাদের একটাই ছিল সেটা সানতাড় সমাজকে টিকিয়ে রাখা।
সানতাড় সমাজে একটা কথা প্রচলন এখনও আছে " যে পুরুষ অযোধ্যা পাহাড় শিকার করতে যায়নি , সে এখনও মাতৃগর্ভে আছে, মরদ হয়নি " ( অবশ্য বিজ্ঞানের ভাষাই পুরুষ সংক্রান্ত অন্য থিওরি আছে )
যারা গিয়েছে তার ভালোভাবে শিকার যে জায়গায় সবাই মিলিত হয় সেটাকে "সুতান টান্ডি" নামক স্থানে সানতাড় সমাজের বিভিন্ন সমস্যা , আলোচনা করা হয়, যেটা কে ল-বির বাইসি বলা হয়। সেখানেও সুপ্রিমো করা হয়না কিন্তু একটা পরিচালন সমিতির দ্বারা আলোচনা করা হয়। সেখানে কারা প্রতিনিধিত্ব করবে সেখানে বুদ্ধিজীবী/পারগানা রায় কিন্তু এগিয়ে আসেন।
আমরা লক্ষ করেছি স্বাধীনতা পিরিয়ডের সোনারাম সরেন এর নেতৃত্বে আলাদা রাজ্যে বা সানতাড় দের স্বায়ত্তশাসিত রাজ্যে র দাবি আন্দলন করা হয়েছিলো। কিন্তু তার পর যারাই নেতৃত্বে দিয়েছিলো তাদের তাদের নাম আমরা কেন কোনো ইতিহাসবিদরা লিখে রাখে নি। তার কারণ ভারতের একটা অংশ চাই এরা নিজেদের ইতিহাস জানুক পরবর্তী বংশধররা ।
পশ্চিম বাংলায় মান্জহী ব্যবস্থার মূল আন্দোলনের স্থান মেদিনীপুর, বাঁকুড়া পুরুলিয়া যেটা শিকার দিসম , সিলদা দিসম এর অন্তর্গত।
ষাট এবং সত্তর দশকে মানতান মহেন্দ্র হেমব্রম এর নেতৃত্বে মান্জহী মান্ডওয়া বৃহত্তর আন্দোলন শুরু হয়। তার পর মোহনদাস মানডি, এরপর মান্জহী মান্ডওয়ার পরবর্তী দায়িত্ব মানতান নিত্যানন্দ হেমব্রম এর উপর।
নিত্যানন্দ হেমব্রম গমকে জন্মসূত্রে সিলদা দিসম নিকট এর তাই তিনি আমার, আপনার থেকে বেশি ভালোই অবগত করেছিলেন মান্জহী মান্ডওয়া আন্দোলনের । পরবর্তীতে তিনিই পশ্চিম বাংলার অন্তর্গত বিভিন্ন দিসমের প্রতিনিধিরা "দিসম মান্জহী" পদে নির্বাচিত করেন।
এরপর ভাবছি তনল সাহেবকে পারগানা পদ টা দিলে কেমন হয়? আপনারা জানাবেন!
*"মানঝি-পারগানা-বাইসি"* এই তিনটি শব্দের আলাদাভাবে আলাদা কাজ করে কিন্তু এটিই সানতাড় সমাজকে হাজার হাজার টিকিয়ে রেখেছে।
বিগত কয়েকদশক থেকে ওড়িশার মান্জহী পারগানা মাহা সেনেলেদ, পশ্চিম বাংলার মান্জহী মান্ডওয়া , মানঝি মাপাজি মান্ডওয়া, ঝাড়খণ্ডের মান্জহী পারগানা মহল, পূরবী সিংভূম মান্জহী পারগানা মহল, মান্জহী পারগানা এভেন বাইসি দুমকা প্রভিতি সংগঠনরা মান্জহী-পারগানা দের সঙ্ঘবদ্ধ করবার কাজ করে আসছে। 2013 এদের মিলিত সম্মিলিত ঐক্যের নাম " ভারত জাকাত মান্জহী পারগানা মহল" । এবং বিভিন্ন দিসম ও রাজ্যর অন্যান্য মান্জহী সংগঠনের প্রতিনিধিরা "মানতান নিত্যানন্দ হেমব্রম" কে "দিসম-পারগানা" পদে নির্বাচন করেন।
আরেকটি প্রশ্ন উঠেছে , সেটা হলো পারগানা দের কিভাবে নির্বাচন করা হয় ?
উত্তর টা জটিল কিন্তু না দিলেও হবেনা যে। ইনি বলেছেন সানতাড় সমাজের নীতি ব্যবস্থা নির্বাচন করতে "তোড়েগর বাহা বাদেলা পুখরির" জল পান করে শেষ করে ফেলেছিলেন। বর্তমানেও গণতান্ত্রিক উপায় নির্বাচন করতে হবে নাহলে সেটা অগণতান্ত্রিক। বেশ ভালো কথা আবার তিনি এক জায়গায় বলছেন ল বির বাইসি (ল-মহল)তে যে সর্বোচ্চ পরিষদ গঠন হয় সেটা ওখানে ছাড়া কোথাও প্রযোজ্য হয়না। আবার তিনি বলেছেন আপনি রাজেন্দ্রপ্রাসাদ এবং নেহেরু-র যে উদাহরণ দুইটি দেওয়া হয়েছে , সেই দুইটির প্রযোজ্যতা কি সান্তাল সমাজ, সংস্কৃতি এবং স্বশাসন প্রতিষ্ঠান গুলির ক্ষেত্রে খাটে?
এখন একটা জিনিস পরিস্কার হলো যে নির্বাচন প্রতিষ্ঠান এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান আলাদা আলাদা সংস্থা ! তাইতো!
এখানে আমরা জানি ভারতের বিধায়ক ও সাংসদ দের দের নির্বাচন সংখ্যাগরিষ্ঠ ভাবে জয়ী হলে নির্বাচন হয়। সোজা ভাষায় নির্বাচন টুর্নামেন্টের জয়ী হয়ে উইনার্স হয়। নির্বাচন কমিশন কাউকেও নিজ ইচ্ছাই সংসদ বিধায়ক ঘোষণা করতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী হতে চাইলে সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ থাকতে হবে।
বেশ ভালো কথা ।
কিন্তু রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কেন সাধারণ মানুষ নির্বাচন করার ক্ষেত্রে সেটা কেনো প্রযোজ্য নেই ?
সেটাও বাদ দিলাম।
আমরা সবাই জানি ভারত গণতান্ত্রিক দেশ যার প্ৰধান মন্ত্রী , খাদ্যমন্ত্রী, রক্ষা মন্ত্রী সহ যাবতীয় মন্ত্রী রা হয়।
কিন্তু 1946 সালে 2nd অক্টোবর ভারতের প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহরু , সমেত পুরো মন্ত্রিসভা গঠিত হয়ে গেলো , এমনকি বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী রাও রাতারাতি তৈরী হলো। এটা ঠিক বুঝতে পারলামনা, যদি সাহেবরা আপনি বুঝিয়ে দিলে ভালো হয়।
তাহলে কি "স্বায়ত্বশাসনের প্রতিষ্ঠান " এর সংজ্ঞা (definition) কি বুঝব ? যদি কোনো সাহেব বুঝিয়ে দেন তাও হবে!
আসলে সবই ঠিক আছে! একটা জায়গায় যতসব প্রশ্ন' সেটা হলো-
মান্জহী থাকতে পারে কিন্তু কেউ দিসম-মান্জহী পদ টা থাকলে প্রশ্ন উঠাবো ?
পারগানারা থাকতে পারেন কিন্তু কেউ দিসম-পারগানা পদে থাকলে সেটা প্রশ্ন উঠাবো ?
বর্তমানে একটা ভাই তার বড় ভাইকে মানেনা, মতের মিল থাকছে না, সেখানে 1855 সালে সিদু পারগানা, কানু পারগানা , চাঁদ পারগানা, ভৈরব পারগানা, ও সাম পারগানা, সিংরাই পারগানা, মুচিয়া পারগানা, লক্ষণ পারগানা, রা সানতার সমাজের "সারজম-ঢাওরৌ- গিরা" দিয়ে ডাক দিলো আর 30 হাজার সানতাড় রাজি হয়ে গেল অবধারিত মৃত্যবরন করতে ?
আমার প্রশ্ন কেন মানবো ?
একটা ঘটনা বলি -
আমি তখন সবে চাকরী পেয়েছি এলাকায় সামাজিক আন্দোলন না জড়িত থাকার জন্য 30 শে জুনের ঘটনা মনে পড়ে । একজন চাকরি জীবী দাদাকে মনে হয় 100 টাকার চাঁদার রশিদ দিয়েছিলো আমার সহকর্মীরা, তারপর আমরা বুঝলাম তার কোনো মুল্যবান কিডনি চেয়ে ফেললাম নাকি ? যে এত কথা শোনালো ।
সেখানে 150 বছরের আগের সময়ে হাজার হাজার মানুষ মাথা নত করে কথা মেনে নিল।
যদি সিদু মুর্মু হয় , তাহলে কি সেখানে ভোট হয়েছিলো?
নাকি ওয়্যাকওভার পেয়েছিলো ?
নাকি সবচাইতে "শ্রেষ্ট পারগানারা" তাকে দায়িত্বে ন্যাস্ত করেছিল সমাজের বিষয়ে চূড়ান্ত-সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে ?
সত্যিই দুর্ভাগ্য আমাদের কোনো ঐতিহাসিক তার নাম ইতিহাসে তো লিখলো না।
মন আমার বলে-
"হয় যদি টাইম মেশিন পেতাম, সেই দৃশ্য দেখতে একবার অবশ্যই যেতাম"।
তাহলে হলফ করে বলতে পারি হাজারে হাজারে মানুষের বিশ্বাস ছিলো "মান্জহী পরিকাঠামো" আর পারগানা ব্যবস্থা"র উপর। এটাই বাস্তব আর চিরন্তন সত্য।
তনল সাহেব 1855 তে মান্জহী, পারগানারা ছিল স্বীকার করছেন , কিন্তু তাদের নাম , তাদের বাবার নাম , ঠাকুরদার নাম, তার ঠাকুরদার বাবার নাম জানার দরকার হয়েছে , ও জানতে চাইছেন? তাহলে তাকে কি বললে ভালো হয় আপনারা সেটা জানাবেন।
যাদের পূর্বপুরুষরা খ্রিষ্টান ধর্ম আপন করেছিল তাই নিজের পাঁচপুরুষ এর নাম ধাম ঠিকানা নথি করে রেখেছে, কিন্তু আমরা এই তো স্বাধীনতার 40 বছর পর "ফার্স্ট জেনেরেশান লারনার" কারন আমরা সমাজ ও ধর্মকে বিক্রি করিনি। তাই লিখে রাখিনি। সুধু নাম মনে করে রেখেছি।
"মান্জহী"-"পারগানা"-"মহল/বাইসি" এই তিনটি শব্দ নয়, এটি সানতাড় তিনটি স্তম্ভ যেটা ছাড়া সানতার কোনোদিনই অস্তিত্ব বাঁচাতে পারবে না।
যারা "মানতান নিত্যানন্দ হেমব্রম" কে কটাক্ষ করে বলছেন, তাদের উদ্দেশ্যে বার্তা
""সময় বলবে ,
সময় লিখবে ,
ভারত জাকাত মান্জহী পারগানা মহলের ইতিহাস""।
বুকের পাটা থাকলে, সামাজিক মাধ্যম নয়, ফেসবুকে নয় থেকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে মাঠে নামুন, মাইক ধরুন, পারগানাদের বিরূদ্ধে লড়াই করুন, দেখে নেওয়া যাবে কে কতটা মাতৃগর্ভে বেরিয়ে আছে।
Post By - Santali Arichali
Copyright Contact™ — FACEBOOK
0 Comments