একটি রায়, ১১ লাখ উচ্ছেদ: আদিবাসীদের জমি ছিনিয়ে নেওয়ার আইনগত হত্যাকাণ্ড! | One Verdict, One Lakh Evictions: Legal Genocide Against India’s Indigenous!

একটি রায়, এক লাখ উচ্ছেদ – আদিবাসীদের বিরুদ্ধে আইন-নির্ভর জাতিসংহার?




২০০৬ সাল। ভারতের সংসদে পাশ হলো একটি যুগান্তকারী আইন – Forest Rights Act, সংক্ষেপে FRA। উদ্দেশ্য ছিল একটাই – যারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে অরণ্যে বাস করছে, তাদের অধিকার স্বীকৃতি দেওয়া।

এই আইনের কেন্দ্রে ছিল আদিবাসী জনগোষ্ঠী এবং অন্যান্য বননিবাসী সমাজ।

দুই শতকের ঔপনিবেশিক দমন, বনদপ্তরের বর্বর দখলনীতি ও আধুনিক রাষ্ট্রের অদৃশ্য গোঁজামিলের পরে, ভারত সরকার প্রথমবারের মতো স্বীকার করেছিল –

“বন শুধু গাছপালা নয়, বন এক জীবন্ত সংস্কৃতি – এক জীবনচক্র।”

কিন্তু এরপর ঘটল ইতিহাসের এক ভয়াবহ মোড়।

২০০৮ সালে, Wildlife First নামে একটি পরিবেশবাদী এনজিও সহ কয়েকটি সংগঠন Supreme Court-এ একটি মামলা করে। তাদের অভিযোগ ছিল:

“FRA আইনের অপব্যবহার হচ্ছে। বনভূমি দখল করে নিচ্ছে কিছু লোক। যারা প্রকৃত আদিবাসী নয়।”

এভাবেই জন্ম নেয়: Writ Petition (Civil) No. 109 of 2008 – Wildlife First vs Union of India

এই মামলার দীর্ঘ ১১ বছরের শুনানি শেষে, ২০১৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি, ভারতের Supreme Court এক ভয়াবহ রায় দেয়।

রায়ে বলা হয়:

“Forest Rights Act-এর আওতায় যাদের আবেদন খারিজ হয়েছে, তাদেরকে বনভূমি থেকে উচ্ছেদ করতে হবে।”

একটি ছোট্ট লাইনের এই নির্দেশই বদলে দেয় লক্ষ লক্ষ মানুষের ভাগ্য।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, তখন পর্যন্ত মোট ১৯.৫ লক্ষ FRA আবেদন খারিজ হয়ে গিয়েছিল। এর মধ্যে ছিল প্রায় ১১.৮০ লক্ষ পরিবার, যাদের এখন উচ্ছেদের মুখে দাঁড়াতে হয়।

এই রায়ের ফলে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে:

  • মধ্যপ্রদেশ
  • ওড়িশা
  • ছত্তিশগড়
  • রাজস্থান
  • মহারাষ্ট্র
  • ঝাড়খণ্ড
  • পশ্চিমবঙ্গ
  • ত্রিপুরা

এই রাজ্যগুলোতেই FRA আবেদনকারীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ছিল।

প্রশ্ন উঠেছিল: এই আবেদন খারিজ কেন? জমি দাবি খারিজ মানে কি জমির ওপর অধিকার নেই?

আদিবাসীরা বলে উঠেছিল:

“আমাদের পূর্বপুরুষেরা এখানে চাষ করেছেন, বেঁচেছেন, মরেছেন। কিন্তু আজ সরকার বলে কাগজ নেই, তাই আমরা অবৈধ!”

হ্যাঁ, কারণ FRA-এর আবেদন প্রমাণ করার জন্য প্রয়োজন ছিল রাজস্ব রেকর্ড, পুরোনো ম্যাপ, বন বিভাগের কনসেন্ট।

কিন্তু বাস্তবতা হলো, অধিকাংশ আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কাছে এসব ছিল না। কারণ তারা যুগ যুগ ধরে মৌখিক ঐতিহ্যে, সামাজিক সাক্ষ্যে ও প্রথাগত নিয়মে জমি ব্যবহার করে এসেছে।

এই বাস্তবতাকে অগ্রাহ্য করে, Supreme Court বলে দিল –

“তোমার আবেদন খারিজ? তাহলে তুমি দখলদার। এখন বন ছাড়ো।”

এই রায়ের ভয়াবহতা বুঝে উঠেছিল দেশের একাংশ – কিন্তু বহু অংশ ছিল নিশ্চুপ।

আদিবাসীদের অভিযোগ ছিল:

“পরিবেশ রক্ষার নামে এই এনজিওগুলো আমাদের উচ্ছেদ করে বনকে বড় কর্পোরেট কোম্পানির হাতে তুলে দিতে চায়। এই বন রক্ষা নয়, বন বিক্রির প্রস্তুতি।”

এদিকে, সরকারের ভূমিকা ছিল সন্দেহজনকভাবে নিরব।

২০১৯ সালের রায়ের সময়, Union Ministry of Tribal Affairs ও Forest Ministry অনেক শুনানিতেই উপস্থিতই ছিল না। রাজ্য সরকারগুলোও তাদের জেলার FRA আবেদন খারিজ নিয়ে সঠিক তথ্য দেয়নি।

ফলত, Supreme Court ধরে নেয় – আবেদন খারিজ মানেই অবৈধ দখল।

এই আইনসিদ্ধ ভুলে তৈরি হয় ভারতের অন্যতম বৃহত্তম আইনি গণউচ্ছেদের প্রেক্ষাপট।

তীব্র প্রতিবাদের মুখে কেন্দ্র সরকার পরে রিভিউ পিটিশন দায়ের করে, এবং আদালত উচ্ছেদ স্থগিত রাখে।

কিন্তু প্রশ্ন রয়ে যায়:

✊ আজও কি FRA-এর আওতায় থাকা আদিবাসীরা নিরাপদ?
❓ FRA কি আদিবাসীদের অধিকার দিচ্ছে, না বঞ্চনার নতুন ফাঁদ?
⚖️ একটি আইনের ভুল ব্যাখ্যা কি লাখো মানুষের অস্তিত্ব বিপন্ন করতে পারে?

Forest Rights Act - আদিবাসীদের অস্তিত্ব রক্ষা নাকি অস্তিত্ব ধ্বংসের হাতিয়ার?

এই প্রশ্ন আজ শুধু আইনজ্ঞদের নয়, দেশের বিবেকবান মানুষের কাছে ছুঁড়ে দেওয়া হলো।

Post a Comment

0 Comments