মধ্যপ্রদেশের সিংরাউলি জেলায় আবারও শুরু হয়েছে বিতর্ক — এবার কেন্দ্রবিন্দুতে আদানি গ্রুপের ধিরাউলি কয়লা খনি প্রকল্প। কৃষক, আদিবাসী ও পরিবেশবাদীদের অভিযোগ, এই প্রকল্পের নামে জোর করে জমি অধিগ্রহণ, বনাধিকার আইন (Forest Rights Act) লঙ্ঘন এবং স্থানীয় গ্রামসভাকে উপেক্ষা করা হয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত ২০১৯ সালে, যখন কেন্দ্রীয় সরকার ধিরাউলি কয়লা ব্লক আদানি গ্রুপের হাতে তুলে দেয়। ২০২৫ সালেও এই প্রকল্প ঘিরে উত্তেজনা থামেনি। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ অভিযোগ করেন, প্রায় ৩৫০০ একর বনজমি স্থানান্তরের সময় “দ্বিতীয় ধাপের পরিবেশ ছাড়পত্র” ও গ্রামসভার সম্মতি ছাড়াই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে — যা সরাসরি Forest Rights Act (FRA)-এর লঙ্ঘন।
“আমরা চাষ করি, ওরা আসে মাটি সমান করতে — কোনো নোটিশ, কোনো আলোচনা কিছুই নেই।” — স্থানীয় কৃষকের অভিযোগ
স্থানীয় কৃষক ও আদিবাসীদের দাবি, জমি অধিগ্রহণের সময় তাঁদের মতামত নেওয়া হয়নি, দেওয়া হয়নি যথাযথ ক্ষতিপূরণ বা পুনর্বাসনের ব্যবস্থা। বরং তাঁদের জমিতে বুলডোজার চালানো হয়েছে, ফসল কাটা পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, কোম্পানির তরফে বলা হচ্ছে যে তারা কয়লা মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে সব আইনি অনুমোদন পেয়েছে এবং সেপ্টেম্বর ২০২৫ থেকে উৎপাদন শুরু করার অনুমতি মিলেছে। কিন্তু সেই ঘোষণার পর থেকেই বাড়তে থাকে বিরোধ। কারণ, ওই অঞ্চলটি ভারতের সংবিধানের পঞ্চম তফসিলভুক্ত এলাকা, যেখানে আদিবাসীদের জমি, বন ও প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর বিশেষ অধিকার রয়েছে।
📍 মূল অভিযোগ: বনাধিকার আইন লঙ্ঘন, গ্রামসভার অনুমতি ছাড়াই জমি হস্তান্তর, ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের অভাব।
কংগ্রেসসহ বিভিন্ন পরিবেশ সংগঠন দাবি করছে, এই প্রকল্পে আদিবাসীদের “কমিউনিটি ফরেস্ট রাইটস” ও “হ্যাবিটেশন রাইটস” স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু গ্রামবাসীদের অভিযোগ, এইসব “প্রক্রিয়া”র আড়ালে তাঁদের বাস্তুচ্যুত করা হচ্ছে বিনা আলোচনায়।
অবস্থা এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে, প্রশাসন ধারা ১৪৪ জারি করে ওই অঞ্চলে সমাবেশ নিষিদ্ধ করে। তবুও প্রতিবাদ অব্যাহত — কারণ এই আন্দোলন এখন শুধুই জমি নয়, অস্তিত্বের প্রশ্ন হয়ে উঠেছে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, সিংরাউলির এই ঘটনা স্পষ্ট করে দেয় যে “উন্নয়ন” যদি মানুষের জীবন, সংস্কৃতি ও পরিবেশের ক্ষতি করে, তাহলে সেই উন্নয়ন প্রশ্নের মুখে পড়বে। আইন যদি শুধুমাত্র কাগজে থাকে আর বাস্তবে তার প্রয়োগ না হয়, তাহলে গণতন্ত্রের মূল সত্তাই হারিয়ে যায়।
“উন্নয়ন যদি মানুষের থেকে তার জমি কেড়ে নেয়, তবে তা উন্নয়ন নয়, অন্যায়ের নাম।” — সামাজিক কর্মী
এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন — সরকার ও কোম্পানি কি আদিবাসীদের কথা শুনবে? নাকি আবারও “উন্নয়নের নামে উচ্ছেদ” হবে ভারতের সবচেয়ে প্রাচীন বাসিন্দাদের?
0 Comments