মধ্যপ্রদেশের বৈগা লহরী বাঈ — ১৫০টি দেশি দানাশস্যের বীজ সংরক্ষণ: পাহাড়ের কন্যা, দেশের রক্ষিকা
শৈশবের বুকে সাজানো বুড়ির শেখানো কথা — “মিলেট শুধু ভোজন নয়, জীবনের প্রতিরোধ”— সেই বিশ্বাস নিয়েই লহরী বাঈ ১৮ বছর বয়সে শুরু করেন বীজ সংগ্রহ। আজ ২৭-এ পৌঁছে তিনি সংরক্ষণ করেছেন ১৫০+ দেশি বীজ—একটি জীবন্ত বীজ-ব্যাংক।
লহরী বাঈ (Baiga community, Silpadi village, Dindori district) — একটি নাম নয়; এটি হল এক প্রজন্মের জ্ঞানেরো এক ধারক। তিনি বলেন, “বীজ সংগ্রহ করতে আমার ভালো লাগে। আগে মানুষ হাসত, বলত কেন করছি… কিন্তু চুপচাপ করতাম। কিছু বীজ আমাদের সম্প্রদায়ের বয়োজ্যেষ্ঠ ছাড়া আর কেউ চিনতেই পারে না।”
শুরুটা কেন—ও কী ভাবে?
লহরীর অনুপ্রেরণা তাঁর দাদি—যিনি বহু ধরনের মিলেটের উপকারিতা ও বীজ শনাক্ত করার শাস্ত্রীয় জ্ঞান লহরীর কাছে রেখে যান। ১৮ বছর বয়সে গ্রাম-বিকাশের কাজের মাঝে তিনি লক্ষ করলেন বহু দেশি প্রজাতি হারিয়ে যাচ্ছে; তখনই স্থানীয় মাঠ, ঝুপড়ি-ঘেরা জঙ্গল ও প্রতিবেশী জমি থেকে বীজ সংগ্রহ শুরু করেন।
বীজ-ব্যাংকের গুরুত্ব
এই বীজ-সংগ্রহ শুধুমাত্র ঐতিহ্য সংরক্ষণ নয়—এটি ভবিষ্যতের খাদ্য নিরাপত্তার এক জরুরি ভাণ্ডার। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তন, অনাবৃষ্টি ও মাটি দূষণের মধ্যে টিকে থাকার উপযোগী দেশি প্রজাতিগুলোই আগামী দিনের টেকসই কৃষির ভিত্তি। গবেষকরা বারবার বলছেন—স্থানীয়, আদি বীজগুলোর জেনেটিক বৈচিত্র্যই পারে ভবিষ্যৎ সংকট মোকাবিলা করা।
কীভাবে কাজটি প্রভাব ফেলছে?
লহরীর উদ্যোগ স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াচ্ছে—অনেকে তাঁর কাছে বীজ চেয়ে নিন এবং নিজ জমিতে চাষ শুরু করেছেন। স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠরা বলছেন, “যদি এইরকম বীজ হারিয়ে যেত, তো ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আমাদের খাদ্যের ঐতিহ্য আর থাকত না।”
“যতদিন বাঁচব, বীজ সংগ্রহ করেই যাব।” — লহরী বাঈ
নীতিগত ও গবেষণাগত অর্থে সম্ভাবনা
সরকারি ও একাডেমিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মতে, এমন স্থানীয় বীজ-ব্যাংক জাতীয় বীজ নীতির সঙ্গে যুক্ত হলে —বীজ বহুমাত্রিকভাবে রক্ষা, রেজিস্ট্রেশন এবং সম্প্রসারণে সহায়তা পাওয়া যাবে। পাশাপাশি স্থানীয় জ্ঞানকে নথিভুক্ত করে কৃষি গবেষণায় তা গুরুত্বপূর্ণ ডেটাসেট হিসেবে কাজ করবে।
সংক্ষিপ্ত পরামর্শ (Local → Global)
- স্থানীয় বয়স্কদের জ্ঞান নথিভুক্ত করুন এবং বীজ লেবেলিং করুন।
- কমিউনিটি বীজ-ব্যাংকগুলোকে সরকারি ও এনজিও সহায়তা দিন।
- বাজারে দুর্লভ মিলেটের ডিমান্ড বাড়াতে স্থানীয় চাহিদা-উদ্দেশ্যে ভোক্তা সচেতনতা বাড়ান।

0 Comments